ঘোষণা ক’রে ঘোষক হওয়া যায়, মুজিব হওয়া যায় না
'মুজিব যদি ধরা না দিয়ে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করতেন, কোন
ভাঙা বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করতেন, তাহলে কি আমাদের
মুক্তিযুদ্ধ আরো তীব্র, আরো সফল হতো? তাহলে কি তিনি মুজিব হতেন? তাহলে তো
তিনি হতেন মেজর জিয়া। মুজিব পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিলে
মুক্তিযুদ্ধ হতো না, তিনি মুজিব হতেন না, হতেন সামান্য “বিচ্ছিন্নতাবাদী”,
এবং আমরা একটি বিশাল রাজনীতিক ভাবপ্রতিমাকে হারাতাম, মুক্তিযুদ্ধে আমরা এতো
অনুপ্রেরণা বোধ করতাম না। যোদ্ধা মুজিবের থেকে বন্ধী মুজিব ছিলেন অনেক
শক্তিশালী ও প্রেরণাদায়ক, তিনি তখন হয়ে উঠেছিলেন মহানায়ক, ঘোষকের থেকে অনেক
ওপরে যাঁর স্থান।
মুক্তিযুদ্ধের সময়টি ভ’রে তিনিই ছিলেন নিয়ন্ত্রক ও প্রেরণা,
তিনিই ছিলেন, এক অর্থে, মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের কারাগারে তিনি হয়তো
মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতেনও না, পাকিস্তানিরা তাঁকে তা জানতে দেয় নি,
মুক্তিযুদ্ধের রূপ কী তা হয়তো তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি; কিন্তু সমগ্র
বাঙালির রূপ ধ’রে তিনিই ক’রে চলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে প্রতিটি
বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাই ছিলো মুজিবের দ্বিতীয় সত্তা। মুজিবের বন্দীত্ব
মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণার থেকে অনেক বড়ো ঘটনা।
ঘোষণা ক’রে ঘোষক হওয়া যায়, মুজিব হওয়া যায় না।'
-হুমায়ুন আজাদ
গ্রন্থঃ আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম
গ্রন্থঃ আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম
No comments