Header Ads

খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম

আজ ৭ই নভেম্বর। আজকের দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় যোদ্ধা বীর উত্তম খালেদ মোশাররফকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।


খালেদ মোশাররফ মুক্তিযুদ্ধে ২নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তার কাছ থেকেই গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন রুমি, বদি, আজাদ, জুয়েলসহ হাজার হাজার অকুতোভয় তরুণ যোদ্ধা। ক্র্যাক প্লাটুনের মতো দুর্ধর্ষ বাহিনী তৈরী পেছনের মাস্টারমাইন্ড এই বীর সৈনিক।

খালেদ মোশাররফ গেরিলা প্রশিক্ষণের সবসময় বলতেন, 'কোনো স্বাধীন দেশ জীবিত গেরিলা চায় না; চায় রক্তস্নাত শহীদ।'

তার নেতৃত্বেই গেরিলারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ভেদ করে পরপর দুইবার হামলা করে। পেট্রোল পাম্প, সেনানিবাসে ঈদের জমায়েতে, আর্মি চেকপোস্টে, ডিআইটি ভবনে, দুই নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টারে রক্তশীতল করে দেওয়া অপারেশন শুরু করে ঢাকার গেরিলারা।

খালেদ মোশাররফ এ ধরনের গেরিলা হামলার নাম দিয়েছিলেন ‘সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার’। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকাবাসীর কাছে খালেদ মোশাররফ ছিলেন কিংবদন্তীতুল্য এক চরিত্র।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনী মোশতাক আর বিপথগামী সেনাবাহিনী এক অন্ধকার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে পরিচালনা করা শুরু করে।

খালেদ মোশাররফ ৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ সালে বিনা রক্তপাতের মাধ্যমে খুনী খন্দকার মোশতাককে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যাকারী মেজর ফারুক, মেজর রশিদ সহ আরও কিছু অফিসার দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হন খালেদ মোশাররফের কারণে।

খালেদ মোশাররফের দূর্ভাগ্য তিনি জাতীয় চার নেতাকে ৩ নভেম্বরের হত্যাকান্ড থেকে বাঁচাতে পারেননি। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয় ভোরবেলা। আর খালেদ মোশাররফ এই খবর পান অভ্যুত্থানের পর বিকাল ৩ টার পর।

খালেদ মোশাররফ ক্ষমতা গ্রহণের পর সর্বপ্রথম ঢাকার রাজপথে বঙ্গবন্ধুর জন্য মিছিল বের করা হয়। মিছিলে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার চেয়ে স্লোগান এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়। সাধারণ মানুষ ধারণা করছিলো দেশ আবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কাছে ফিরে গেছে।

কিন্তু ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে একটি রক্তক্ষয়ী সেনা অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়। খালেদ মোশাররফ যখন সেনা অভ্যুত্থানের খবর পান তখন তিনি কফির মগ হাতে বসে ছিলন। তার সাথে ছিলো মেজর হুদা এবং মেজর হায়দার। তারা দুইজন চারিদিকে যোগাযোগ করছিলো নিজেদের জীবন রক্ষার জন্য। এক পর্যায়ে খালেদ মোশাররফ বলে উঠেন, 'নতজানু হয়ে জীবন ভিক্ষা করে নিজেদের ছোট না করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়া ভালো।'

খালেদ মোশাররফ একটি সিগারেট ধরিয়ে তার স্ত্রী সালমাকে টেলিফোন করেন। শেষবারের মত তিন রাজকন্যা মেয়ের সাথে কথা বলেন। তিনি তাঁর তিন কন্যাকে বলেন, 'তোমাদের মধুর হাসি, ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি।'

অফিসারদের হুকুমে বিপ্লব নামের এক সৈনিক দ্বারা খালেদ মোশাররফকে হত্যা করা হয়। এই ব্যাপারে দুইজন অফিসার দায়িত্ব পালন করেন। মজার ব্যাপার হলো খালেদ মোশাররফ এই দুই অফিসারকেই অত্যন্ত পছন্দ করতেন। কে ফোর্সের অধীনে এই দু'জন খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে ক্যাপ্টেন আসাদকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত্রুর হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম খালেদ মোশাররফের মৃত দেহ পড়ন্ত দুপুর বেলায় ক্যান্টনমেন্টের রাস্তায় খেজুর গাছের নিচে অপমানে আর অবহেলায় পড়ে ছিলো।

আফসোস! কেউ এই বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশটা দাফন করার সাহস পাচ্ছিলো না। অথচ তিনিই মুক্তিযুদ্ধে মাথায় শত্রুর বুলেটের আঘাত নিয়ে এই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। কি নির্মম!

No comments

ওয়াজ মাহফিলের চরিত্র বদলে গেছে

ওয়াজ মাহফিলের মধ্যে যেদিন থেকে রাজনীতি ঢুকেছে , জামাতিরা ঢুকেছে সেদিন থেকে ওয়াজ মাহফিলের চরিত্র বদলে গেছে ।।  সেদিন থেকে ওয়াজে :১) সাম...

Powered by Blogger.