Header Ads

আমাদের হুমায়ুন সাধু


বামন আকৃতি নিয়ে জন্মানোটা একটা অভিশাপ,আমাদের দেশে। শুধু আমাদের দেশেই বা বলি কেনো, পৃথিবীর অনেক দেশেই। প্রায় সব দেশেই। কিন্তু আমাদের দেশে এই আকৃতির মানুষদের প্রতি গড় উচ্চতার মানুষের বিরামহীন তুচ্ছ্বতাচ্ছিল্য, ঠাট্টা, অবজ্ঞা, অসম্মান, কটুক্তি, নিগ্রহ এবং ফিজিক্যাল য়্যাবিউজের মাত্রাটা সহ্যের সীমা অতিক্রমী। ইতরপনা কার্য ওদের ঘটে অহর্নিশি।

ক্লাশে-মহল্লায়-পরিবারে কিংবা পার্কে-রেস্তোরাঁয়-জনারণ্যে সর্বত্রই দিবানিশি টিজিং-এর শিকার হতে হয় খর্বাকৃতির মানুষদের। বামনাকৃতি নিয়ে জন্ম নেয়াটাই যেনো পাপ। যে জন্মের জন্যে সে নিজে দায়ি নয়। অথচ দায়টা বহন করতে হয় আজীবন,তাকেই।  
একজনও কি নিখুঁত মানুষ পাওয়া যাবে এই পৃথিবীতে। যাবে না। নো বোডি ইজ পারফেক্ট। কেউই নিখুঁত নয়। দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য নানান রকম ত্রুটি আছে আমাদের শরীরে। 

আধুনিক দুনিয়ায় 'বডি শেমিং' খুব নিকৃষ্ট ধরণের একটা অপরাধ। উন্নত দেশগুলোয় কেউ কারো দিকে খারাপ দৃষ্টিতে এমনকি তাকাতেও সাহস পায় না। নাগরিকরা সভ্য আচরণে অভ্যস্ত এবং বাধ্য। অথচ আমাদের দেশে একজন খুদে মানুষ যেনো বা এজমালি সম্পত্তি। পথে-ঘাটে চলতে ফিরতে বামনাকৃতির কাউকে নাগালের মধ্যে পেলে এমনকি ভয়াবহ রকমের ভীতু লোকটাও বামনের পেটে একটা খোঁচা দিয়ে তৃপ্তিলাভ করে। 

চারপাশে কিলবিল করে ইতরগুলো। 
খুব ছোটবেলায় গ্রামে গিয়ে মুরুব্বীগোছের কাছে একটা প্রবাদবাক্য শুনেছিলাম--'বেঁটে মানুষ খোদার দুশমন।' বিস্ময়কর ব্যাপার সেই হারামজাদাই বলেছিলো সকল মানুষ নাকি খোদার সৃষ্টি! 
ইতরপনা কার্য ওদের ঘটে অহর্নিশি...  
 আমার দেখা পৃথিবী কাঁপানো টিভি সিরিয়াল--গেম অব থ্রোন্স। এই সিরিজের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র টায়রন ল্যানিস্টার। চরিত্রটিতে দুর্দান্ত করেছেন পিটার ডিঙ্কলেজ নামের একজন বামন অভিনেতা। চার ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার ডিঙ্কলেজ এখন তুমুল জনপ্রিয়, বিশ্বব্যাপি। সাইজ ডাজন্ট ম্যাটার--এটা ফের প্রমাণ করেছেন এই মার্কিন অভিনেতা ও প্রযোজক। গেম অব থ্রোনস ছাড়াও কাজ করেছেন এক্সম্যান: ডেইজ অব ফিউচার পাস্ট, দ্য ক্রনিকলস অব নার্নিয়া: প্রিন্স ক্যাসপিয়ানের মতো চলচ্চিত্রে। চার ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষটি এরই মধ্যে জিতে নিয়েছেন গোল্ডেন গ্লোব, প্রাইমটাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ডসহ বহু পুরস্কার।

গেম অব থ্রোন্স-এ দেখেছি--টারগেরিয়ান রাজবংশের একজন উত্তরাধিকারী  টায়রন ল্যানিস্টার নিজের বাবাকে খুন করেন। কেনো? কারণ বামন হওয়ার কারণে বাবা তাঁকে দোষারোপ করতেন। অবজ্ঞা করতেন। অপমান করতেন।  টায়রনকে ছোট থেকেই শুনতে হয়েছে তাঁর দ্বারা নাকি কিছুই হবে না। সেই রাগের প্রতিশোধ নিতেই বাবাকে খুন করেন তিনি। 
অর্থাৎ কীনা কাল্পনিক একটা পৃথিবীর গল্পেও, যার কোনো অস্তিত্ব নেই এই দুনিয়ায়, সেখানেও উচ্চতায় বামন হওয়ার অপরাধে পোহাতে হয় নিগ্রহ, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য, অপমান, অসম্মান এবং কটুক্তি। এবং সেটা পরিবার থেকেও!

টায়রনরূপী পিটার ডিঙ্কলেজকে দেখে বারবার আমার মনে পড়েছে ঊন মানুষের হুমায়ুন সাধু নামের অভিনয় শিল্পীটিকে।  
কোনো একটি বক্তৃতায় বা সাক্ষাৎকারে পিঙ্কলেজ বলেছিলেন--'সারা বিশ্বকে একথা বলার দরকার নেই যে আপনি প্রস্তুত। এটা করে দেখান।'
করে দেখিয়েছিলো আমাদের সাধু। বামন অবয়বের সমস্ত প্রতিকুলতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ক্রমশঃ দীপ্যমান হয়ে উঠছিলো সে। প্রমাণ করেছিলো-- সাইজ ডাজন্ট ম্যাটার। 

এই জীবনে একবারও দেখা না হওয়া  হুমায়ুন সাধু, তোমার জন্যে অনেক অনেক ভালোবাসা। বামনের দেশে তুমি ছিলে এক অপরূপ উচ্চতাসম্পন্ন মানুষ। 

সভ্য দুনিয়ার অসভ্যতা আর নিগ্রহ থেকে আপাত মুক্তি পেলে তুমি। সুতোর ওপারে আশা করি কোনো ইতরপনা স্পর্শ করছে না তোমাকে।  

  অক্টোবর ২০১৯

No comments

ওয়াজ মাহফিলের চরিত্র বদলে গেছে

ওয়াজ মাহফিলের মধ্যে যেদিন থেকে রাজনীতি ঢুকেছে , জামাতিরা ঢুকেছে সেদিন থেকে ওয়াজ মাহফিলের চরিত্র বদলে গেছে ।।  সেদিন থেকে ওয়াজে :১) সাম...

Powered by Blogger.